প্রকল্প সমূহ

গণপরিবহনে ‘রুট মাস্টার’
রাজধানী ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস। যাতায়াতে অধিকাংশ নগরবাসীকে নির্ভর করতে হয় গণপরিবহনের উপর। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে কতগুলো রুট আছে ও কোন রুটে কি কি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলে, সেগুলোর কি কি সুবিধা আছে, ধরণ কি, ভাড়া কত এবং কতক্ষণ পরপর আসে প্রভৃতি না জানায় বহুবিধ সমস্যা ও ভোগান্তির মুখোমুখি হন নাগরিকরা। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে একটি মোবাইল অ্যাপ, USSD ভিত্তিক সিস্টেম এবং কল সেন্টার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে এই প্রকল্পে। এতে হাতের মুঠোয় চলে আসবে সব তথ্য, নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাওয়ার যানবাহনটি সহজে পেয়ে যাবেন তারা।
শিক্ষার জন্য আলো
সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবুও দেশের দেশের অধিকাংশ গ্রামে ও দুর্গম এলাকায় বিদ্যুতের সেবা এখনো পৌঁছেনি। আবার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছলেও সেটা নিরবিচ্ছিন্ন নয়। কেরোসিনের প্রচলিত হারিকেন কিংবা কুপির খরচ বেশি হওয়ায় সেটার ব্যবস্থা করা অনেকের পক্ষে কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সমস্যা সমাধানে স্বল্পমূল্যের বিশেষ সোলার বাল্বের ব্যবস্থা করা হবে এই প্রকল্পে।
রপ্তানিপণ্য প্রমোশনের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম
তৈরি পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, চিংড়িসহ বহু কিছু বিদেশে রপ্তানি করা হয় দেশ থেকে। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা নিয়ে নানারকম রপ্তানিমুখী পণ্যও উৎপাদন করছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক রপ্তানিতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের অভাব আমাদের। এই প্রকল্পের আওতায় সেই অভাব পূরণে রপ্তানি পণ্যের একটি ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
অনলাইনে বিদেশগামী কর্মীদের ভাষা প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশে প্রতিবছর বিদেশে প্রচুর পরিমাণ শ্রমশক্তি রপ্তানি করে থাকে। প্রবাসী শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে অর্জিত টাকায় ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু এই শ্রমিকরা তাদের নিয়োগকারী দেশের ভাষা না জানার কারণে কম মজুরি পান এবং সেখানে গিয়ে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। এই প্রকল্পের আওতায় বিদেশিগামী যাত্রীদের জন্য আরবী, মালয় ও কোরিয়ান ভাষা প্রশিক্ষণের অনলাইন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। দেশের বেশির কর্মী মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার কারণে ওই তিনভাষা প্রায় ৮০শতাংশ বিদেশগামীকে কাভার করবে।
পাটগ্রামে ডিজিটাল কৃষি ক্যালেন্ডারের বিষয়বস্তু আপডেট, ভ্যালিডেশন এবং পাইলট প্রকল্প।
পাঠ সহায়িকা (মোবাইল ফোনে এনসিটিবি’র বই)
বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষক ও অভিভাবক এবং অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীরাও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে বইয়ের বোঝা কমানো যেতে পারে শিক্ষার্থীদের উপর থেকে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের(এনসিটিবি) সব বই মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহার উপযোগী করা হবে। যে কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থী তার মুঠোফোন থেকেই ক্লাসের সব বিষয়ের বই পড়তে পারবেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মানচিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৫ শতাংশ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। পূর্ণ পরিসংখ্যান না থাকলেও, বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি বলে ধারণা করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপে দেশজুড়ে প্রায় ১৫ লাখ প্রতিবন্ধীর তথ্য দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাগরিকদেরকে চলাফেরার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। নিকটতম স্থাপনা, পরিবহন, জরুরি সেবা, বিভিন্ন বাঁক, সড়ক ও ঠিকানার নির্দেশিকার জন্য তাদেরকে ভর করতে হয় চলার সময় হাতের কাছে পাওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে। এই প্রকল্পে মোবাইল ফোনে অ্যান্ড্রয়েড এবং iOS অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্যবহারযোগ্য মানচিত্র এবং নেভিগেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অডিও বার্তায় তারা ওইসব ক্ষেত্রে পথনির্দেশ পেয়ে যাবেন।
আসক্তিমুক্তি
বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কোন না কোন মাদকদ্রব্যে আসক্ত এবং প্রতিদিন এই খাতে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে এবং তাদের ৯৯ শতাংশই হচ্ছে পুরুষ। এর বিপরীতে আসক্তি মুক্তির ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এই প্রকল্পে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। যার মাধ্যমে মাদকাসক্তি সনাক্তকরণ থেকে শুরু করে নিরাময় পর্যন্ত সব কাজের একটি ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপ এবং কল সেন্টার ভিত্তিক সম্পূর্ণ সল্যুশান বের করা হবে।
সরকারি পরিষেবার অডিও নির্দেশনা
জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের প্রক্রিয়ায় সেই সেবাগ্রহণ ও প্রদানের কার্যক্রম অনলাইনে চলে এসেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বড় নির্দেশনা পড়ে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘কি করতে হবে’ (TO DOs) এবং ‘কি করা যাবে না’ (NOT TO DOs) সেটা বুঝা অনেক নাগরিকের পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। এই প্রকল্পে একটি অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে মোবাইল ফোন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য অডিও কন্টেন্ট প্রদান করা হবে। যাতে তারা সহজে বুঝতে পারবে।
রোগীর যত্নের প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান
সময়মতো ওষুধ দেওয়া, নোংরা কাপড় পরিবর্তন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ খাবার প্রস্তুত, ইনজেকশন দেওয়া, ডায়াপার ও ক্যাথেটার পরিবর্তনসহ প্রভৃতি কার্যক্রম থাকে রোগী সেবার ক্ষেত্রে। কিন্তু বিশেষ প্রশিক্ষণ না থাকায় নার্সরা এটা সঠিক উপায়ে করেন না। এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষিত নার্সদের জন্য একটা চাকরির পোর্টাল তৈরি করা হবে, যা বাড়িতে, ক্লিনিকে কিংবা হাসপাতালে রোগী ও বয়স্কদের সব ধরনের সেবা দিতে প্রস্তুত থাকবেন। এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে পুরুষ ও নারী নার্সদের ওয়েব পোর্টালে যুক্ত করা হবে। যেটা দুই মাসের দূরবর্তী শিখন কার্যক্রম এবং নারায়ণগঞ্জ পলি ক্লিনিক অথবা পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ দিন হাতে-কলমে মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এককভাবে কোনো রোগী কেমন যোগ্যতার নার্স চাচ্ছেন সেটা কোন কোন প্রয়োজনে সেটা জানাতে পারবেন। এর মাধ্যমে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী রোগীদের দোরগোড়ায় বিশেষ নার্সিং সেবা পৌঁছে যাবে।
জাতীয় বিনোদন পোর্টাল
নগরীতে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অভাব থাকার অনুযোগ নানা সময়ে শোনা যায়। সেই অভাবের সময়েও কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে হাজির হয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে জেলা প্রশাসক(ডিসি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) লিখিত অনুমতিপত্র নিতে হয়। এই অনুমতি নিতে গিয়ে সময়ক্ষেপনের কারণে অনেক সময় বিভিন্ন সংগঠন অনুমতি ছাড়াই নানা আয়োজন করে ফেলে। এই প্রকল্পের আওতায় সেই অনুমতির প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য জাতীয় বিনোদন পোর্টাল তৈরি করা হবে। যাতে সব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও তাদের অনুষ্ঠানের তথ্যের পাশাপাশি অনুষ্ঠান আয়োজনস্থলের তথ্যও এতে সন্নিবেশিত থাকবে।
স্বল্প খরচে দেশীয় প্রযুক্তির পাওয়ার টিলার
বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লা ৬০ হাজার ৯৬৪ হেক্টর, যার মধ্যে মোট সেচকৃত জমি ৭৪ লাখ ৬ হাজার ৮২২ হেক্টর। এর বিপরীতে আবাদযোগ্য পতিত জমি পড়ে আছে ২ লাখ ১০ হাজার ২৭ হেক্টর। এর বিপরীতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার অতি নগন্য। চাষের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার প্রাপ্তিতে পুরোপুরি আমদানী নির্ভরতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে স্বল্পমূল্যের পাওয়ার টিলার উদ্ভাবন করা হবে এই প্রকল্পে।